শুক্রবার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩ | ১৪ই আশ্বিন ১৪৩০

পরিদর্শক থেকে কনস্টেবল, কক্সবাজার পুলিশের ১৪৮৭ জনকে বদলি

সম্প্রতি কক্সবাজারে পুলিশের গুলিতে সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ নিহত হওয়ার ঘটনা ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। এরপরই কক্সবাজার পুলিশকে ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
এরই ধারাবাহিকতায় ব্যাপক রদবদল করা হয়েছে পুরো জেলার পুলিশে।

ঘটনার দুই মাসের মধ্যেই কয়েক ধাপে জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) থেকে শুরু করে কনস্টেবল পর্যন্ত পুলিশের প্রতিটি পদে আনা হয় পরিবর্তন। এসপি, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও সহকারী পুলিশ সুপারসহ (এএসপি) ঊর্ধ্বতন সব কর্মকর্তাদের বদলি করা হয়।

এরপর সম্প্রতি পৃথক পৃথক প্রজ্ঞাপনে কয়েক ধাপে মাঠপর্যায় পর্যন্ত সদস্যদের বদলির আদেশ দেয় পুলিশ সদর দপ্তর। সর্বশেষ খবর অনুযায়ী, পুলিশের পরিদর্শক থেকে কনস্টেবল পর্যন্ত এক হাজার ৪৮৭ জনকে দেশের বিভিন্ন স্থানে বদলি করা হয়েছে। পক্ষান্তরে এসব পদমর্যাদার এক হাজার ৫০৭ জনকে কক্সবাজার পুলিশে যুক্ত করা হয়েছে।

পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র জানায়, নিরস্ত্র পুলিশ পরিদর্শক পদমর্যাদার ৩৪ জনকে কক্সবাজার থেকে অন্যত্র বদলি করা হয়েছে। পক্ষান্তরে এ পদমর্যাদার ৩৭ জনকে কক্সবাজার পুলিশে যুক্ত করা হয়েছে।

শহর ও যানবাহন পুলিশ পরিদর্শক পদমর্যাদার ১০ জনকে কক্সবাজার থেকে বদলি করে যুক্ত করা হয়েছে নতুন ১০ জনকে। সশস্ত্র পুলিশ পরিদর্শকসহ (আরআই) ছয়জনকে বদলি করে সেসব পদে নতুন ছয়জনকে যুক্ত করা হয়েছে।

এদিকে, উপ-পরিদর্শক (এসআই-নিরস্ত্র) পদের ১৫৪ জনকে কক্সবাজার থেকে অন্যত্র বদলি করা হয়েছে, পক্ষান্তরে একই পদের ১৭০ জনকে কক্সবাজার পুলিশে যুক্ত করা হয়েছে।

এসআই (সশস্ত্র) পদের ২৫ জনকে সরিয়ে নতুন ২৩ জনকে যুক্ত করা হয়েছে। সার্জেন্ট পদেও আটজনকে সরিয়ে নতুন আটজন, টিএসআই পদের পাঁচজনকে বদলি করে নতুন পাঁচজনকে যুক্ত করা হয়েছে।

এছাড়া, ১৪৮ সহকারী উপ-পরিদর্শককে (এএসআই-নিরস্ত্র) বদলি করে একই পদের ১৬৩ জনকে কক্সবাজারে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এএসআই (সশস্ত্র) পদের ২১ জনকে বদলি করে যোগ করা হয়েছে নতুন ২০ জনকে। এটিএসআই ১৯ জনকে বদলি করে নতুন ১৯ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

মাঠপর্যায়ের কনিষ্ঠতম পদের সদস্যদের মধ্যেও নায়েক পদে ৫০ জনকে বদলি করে নতুন ৪৬ জনকে যোগ করা হয়েছে। সবচেয়ে বেশি সংখ্যক বদলি করা হয়েছে কনস্টেবল পদে। এক হাজার সাতজন কনস্টেবলকে অন্যত্র বদলি করা হয়েছে, পক্ষান্তরে একই পদে নতুন যুক্ত করা হয়েছে এক হাজার সদস্যকে।

গত ২৩ সেপ্টেম্বর এক প্রজ্ঞাপনে কক্সবাজারের পরিদর্শক পদের ৩৪ জনকে অন্যত্র বদলি করা হয়। ওই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, বদলিকৃতদের ২৯ সেপ্টেম্বরের মধ্যে পুরাতন কর্মস্থল ছেড়ে দিতে হবে। নতুন কর্মস্থলে যোগদানের আগে ৩০ সেপ্টেম্বর তাদের ঢাকায় একটি ব্রিফিংয়ে উপস্থিত হতে বলা হয়েছে। এজন্য ওইদিন রাজারবাগের পুলিশ অডিটোরিয়ামে নির্ধারিত সময়ে তাদের ইউনিফর্ম পরে উপস্থিত হতে বলা হয়েছে।

এর আগে গত ১৬ সেপ্টেম্বর কক্সবাজারের এসপি এ বি এম মাসুদ হোসেনসহ ঊর্ধ্বতন ছয় কর্মকর্তাকে বদলি করা হয়। এসপি এ বি এম মাসুদ হোসেনকে বদলি করে রাজশাহীর পুলিশ সুপার করা হয়। আর ঝিনাইদহের এসপি মো. হাসানুজ্জামানকে কক্সবাজার জেলা পুলিশের দায়িত্ব দেওয়া হয়।

এসপি এ বি এম মাসুদ হোসেনকে বদলির পর গত ২১ সেপ্টেম্বর কক্সবাজার জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও সহকারী পুলিশ সুপার পদমর্যাদার আরও সাতজন শীর্ষ কর্মকর্তাকে বদলি করা হয়।

গত ৩১ জুলাই টেকনাফের মেরিন ড্রাইভে অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ পুলিশের গুলিতে নিহত হন। এ ঘটনায় টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাস এবং পরিদর্শক লিয়াকতসহ সাতজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে এ ঘটনায় কক্সবাজারের এসপি এ বি এম মাসুদ হোসেনের দায়িত্বহীনতার অভিযোগের বিষয়টি আলোচনায় আসে। এরপর সিনহার পরিবারের পক্ষ থেকে দায়ের করা হত্যা মামলায় এসপির নাম উল্লেখ করার আবেদন করলেও আদালত তা খারিজ করে দেন।

সংবাদটি আপনার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন