রবিবার, ৪ জুন ২০২৩ | ২১শে জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০

দেশের সার্বভৌমত্ব ও সমুদ্র সম্পদ রক্ষায় নৌবাহিনীকে সদা প্রস্তুত থাকার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব এবং সমুদ্রসম্পদ রক্ষায় নৌবাহিনীকে সদা প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, সমুদ্রসীমা অর্জন করেছি।

এখন এই সম্পদটা যেন দেশের উন্নয়নে কাজে লাগে-সে জন্য কাজ করতে হবে। আমরা সুনীল অর্থনীতি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছি।

বৃহস্পতিবার দুপুরে নৌবাহিনীর নতুন তিনটি আধুনিক যুদ্ধজাহাজ ও দুটি জরিপ জাহাজের কমিশনিং অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।

গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে জাহাজগুলো নৌবাহিনীতে কমিশনিং করেন তিনি। চট্টগ্রামে বানৌজা ঈশাখাঁ নৌ-জেটিতে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল এম শাহীন ইকবাল জাহাজসমূহের অধিনায়কদের হাতে কমিশনিং ফরমান তুলে দেন।

পরে প্রধানমন্ত্রী নৌবাহিনীর রীতি অনুযায়ী আনুষ্ঠানিকভাবে নামফলক উন্মোচন করেন। অনুষ্ঠানে নৌবাহিনীর একটি সুসজ্জিত চৌকস দল প্রধানমন্ত্রীকে গার্ড অব অনার প্রদান করেন।

গণভবন প্রান্তে প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউসসহ পিএমও এবং গণভবনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। আর অনুষ্ঠান প্রান্তে সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিশাল এই সমুদ্রের সম্পদ আহরণ এবং তাকে কাজে লাগানোই আমাদের লক্ষ্য এবং সেই লক্ষ্য নিয়েই সরকার কাজ করে যাচ্ছে। আর জাতির পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়নে আমাদের সমুদ্রসীমা রক্ষায় নৌবাহিনীকেও শক্তিশালী করে গড়ে তুলছি।’

তিনি বলেন, ‘এই কমিশনিংয়ের ফলে নৌবাহিনী তার ক্রমাগত অগ্রযাত্রায় আরও একধাপ এগিয়ে গেল। দিনটি শুধু বাংলাদেশ নৌবাহিনীর জন্য নয়, সমগ্র দেশ ও জাতির জন্য অত্যন্ত গৌরবের।

আধুনিক সমরাস্ত্র সজ্জিত দুটি ফ্রিগেট ও একটি অত্যাধুনিক করভেট এবং আমাদের নিজস্ব খুলনা শিপইয়ার্ডে তৈরি দুটি আধুনিক জরিপ জাহাজ সার্বভৌমত্ব রক্ষায় নৌবাহিনীর ক্ষমতাকে আরও জোরদার করবে-এটাই আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস।’

‘ভূরাজনৈতিক প্রয়োজনে একটি শক্তিশালী নৌবাহিনী গঠন করা হবে’-বঙ্গবন্ধুর ভাষণের এই অংশ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শুধু নৌবাহিনী নয়, বঙ্গবন্ধুর ১৯৭৪ সালে করে যাওয়া ‘প্রতিরক্ষা নীতিমালা’র আলোকে ‘ফোর্সেস গোল-২০৩০’ প্রণয়ন করে তা বাস্তবায়ন শুরু করেছি এবং সেইদিক থেকেই আমরা নৌবাহিনীকে আধুনিক ও শক্তিশালী একটি বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলার পদক্ষেপ নিয়েছি।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা নৌবাহিনীতে বর্তমান প্রজন্মের উন্নত সাবমেরিন, যুদ্ধজাহাজ, মেরিটাইম প্যাট্রল এয়ারক্রাফট, হেলিকপ্টার ও বিশেষায়িত বাহিনী সংযোজন করেছি এবং এর মাধ্যমে একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় একটি ত্রিমাত্রিক নৌবাহিনী গঠনের প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছি।’ তিনি বলেন, আমরা কারও সঙ্গে যুদ্ধ করতে চাই না।

জাতির পিতা আমাদের পররাষ্ট্রনীতিতে বলেছেন, সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়। আমরা সেই নীতিতেই বিশ্বাস করি। কিন্তু যদি বাংলাদেশ কখনও বহিঃশত্রুর দ্বারা আক্রান্ত হয়, তাকে মোকাবেলা করার মতো সক্ষমতা আমরা অর্জন করতে চাই। শেখ হাসিনা বলেন, নিজস্ব ইয়ার্ডে জাহাজ তৈরির সক্ষমতা আমাদের আত্মবিশ্বাসকে বলীয়ান করেছে।

আমরা ভবিষ্যতে অন্য দেশের জন্য জাহাজ তৈরি করে সরবরাহ করতে সক্ষম হব। ধীরে ধীরে সেই সক্ষমতাও আমরা অর্জন করব। খুলনা শিপইয়ার্ড এবং ড্রাইডক বাংলাদেশ নৌবাহিনীর হাতে তার ’৯৬-পরবর্তী সরকার তুলে দিয়েছিল বলেই আজ দেশের যুদ্ধজাহাজ নির্মাণ সম্ভব হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতাযুদ্ধের মাধ্যমেই আমাদের নৌবাহিনীর যাত্রা শুরু। নৌবাহিনীর সাহসী সদস্যদের মাধ্যমে পরিচালিত ‘অপারেশন জ্যাকপট’ আমাদের নৌযুদ্ধের ইতিহাসের এক অনন্য বীরত্বগাথা।

দেশ স্বাধীনের পর যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনকালেই বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার লক্ষ্য নিয়ে সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তুলে এর আধুনিকায়নে পদক্ষেপ গ্রহণ করেন।

এর আগে জাতির পিতা পাকিস্তান আমলে তার ছয় দফা প্রস্তাবেও বাংলাদেশেই নৌ-ঘাঁটি করার দাবি করেছিলেন।

তিনি বলেন, বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও বঙ্গবন্ধুর আন্তরিক প্রচেষ্টায় বাংলাদেশকে মুক্তিযুদ্ধে সহায়তাকারী বন্ধুপ্রতিম দেশ ভারত থেকে সংগৃহীত ২টি প্যাট্রল ক্রাফট ‘পদ্মা’ ও ‘পলাশ’ নিয়ে নৌবাহিনীর যাত্রা শুরু হয়।

সমুদ্রসীমায় বাংলাদেশের অধিকার প্রতিষ্ঠায় ১৯৭৪ সালেই জাতির পিতা সমুদ্রসীমা আইন প্রণয়ন করেন, যদিও জাতিসংঘ তা অনেক পরে করেছে।

শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের নৌবাহিনীর সদস্যরা প্রতিনিয়ত লোকচক্ষুর অন্তরালে থেকে অনেক প্রাকৃতিক প্রতিকূলতা মোকাবেলা করে সমুদ্র এলাকার সার্বিক নিরাপত্তার নিশ্চয়তা বিধান করছে, যা প্রশংসার দাবিদার।

আমাদের সুশৃঙ্খল সশস্ত্র বাহিনী দেশের সীমানা ছাড়িয়ে আজ আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও বিপুলভাবে প্রশংসিত পেশাদার একটি বাহিনী।

তিনি বলেন, ২০১০ সাল থেকে ভূমধ্যসাগরে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের অংশ হিসেবে আমাদের যুদ্ধজাহাজ সার্বক্ষণিকভাবে অংশগ্রহণ করছে।

এই বছরের আগস্টে আমরা সেখানে পাঠিয়েছি আমাদের অত্যাধুনিক প্রযুক্তির একটি করভেট বানৌজা ‘সংগ্রাম’, যা বহির্বিশ্বে আমাদের ভাবমূর্তিকে উজ্জ্বল করেছে।

এ ছাড়া দক্ষিণ সুদানেও বাংলাদেশ নৌবাহিনীর কন্টিনজেন্ট অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে আসছে।

শেখ হাসিনা বলেন, শান্তিরক্ষা মিশন ছাড়াও নৌবাহিনী নিয়মিতভাবে বহুজাতীয় এক্সারসাইজ, বঙ্গোপসাগরে ‘কো-অর্ডিনেটেড প্যাট্রল’ ও কূটনৈতিক সফরের মাধ্যমে বাংলাদেশের ‘মেরিটাইম সিকিউরিটি’-কে সুসংহত করে চলেছে।

তিনি বলেন, ‘মালদ্বীপে যখন সুপেয় পানির অভাব হয়েছিল তখন আমরা আমাদের নৌবাহিনীর জাহাজ দিয়ে সুপেয় পানি সেখানে পাঠাই এবং তাদের সহযোগিতা করি। এভাবেই দেশে এবং প্রতিবেশী দেশেও নৌবাহিনী নানারকম সহযোগিতা করে যাচ্ছে। এ জন্য আমি কর্মমুখর এই বাহিনীকে ধন্যবাদ জানাই।’

সদ্য সংযোজিত তিনটি যুদ্ধজাহাজ হল : ওমর ফারুক, আবু উবাইদাহ এবং প্রত্যাশা। এগুলো শত্রুবিমান, জাহাজ এবং স্থাপনায় আঘাত হানতে সক্ষম আধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন কামান, ভূমি থেকে আকাশে এবং ভূমি থেকে ভূমিতে উৎক্ষেপণযোগ্য মিসাইল, অত্যাধুনিক থ্রিডি রাডার, ফায়ার কন্ট্রোল সিস্টেম, রাডার জ্যামিং সিস্টেমসহ বিভিন্ন ধরনের যুদ্ধ সরঞ্জামাদিতে সুসজ্জিত। আর সংযোজিত ২টি জরিপ জাহাজ হল : দর্শক ও তল্লাশি।-বাসস

সংবাদটি আপনার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন