অসরবরাহকৃত অর্ধশতাধিক ড্রিমলাইনার নিয়ে বিপাকে বোয়িং

নভেল করোনাভাইরাস প্রতিরোধে তাত্ক্ষণিকভাবে বিশ্বজুড়ে দেশগুলো যেসব পদক্ষেপ নিয়েছিল, তার মধ্যে আকাশপথে যাত্রী চলাচলে বিধিনিষেধ আরোপ অন্যতম। সম্প্রতি করোনা পরিস্থিতিতে কিছুটা উন্নতি হওয়ায় কিছু দেশ সীমিত আকারে অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি দিয়েছে। তবে দূরপাল্লার ফ্লাইট চলাচল এখনো প্রায় বন্ধই রয়েছে। এ কারণে বড় আকারের উড়োজাহাজগুলোর চাহিদায় মন্দা চলছে। আর এতে বিপাকে পড়েছে মার্কিন উড়োজাহাজ নির্মাতা বোয়িং কোম্পানি। কোম্পানিটির সদ্যনির্মিত বেশ কয়েকটি ৭৮৭ ড্রিমলাইনার ক্রেতারা বুঝে নিচ্ছেন না। ফলে সেগুলো রাখার জায়গা সংকটে ভুগছে বোয়িং। খবর ব্লুমবার্গ।
বোয়িংয়ের ৭৮৭ ড্রিমলাইনার সরবরাহের পুঙ্খানুপুঙ্খ তথ্য রাখেন জনপ্রিয় ব্লগার উরেশ শেঠ। তিনি জানান, এ মুহূর্তে অর্ধশতাধিক ড্রিমলাইনার বোয়িংয়ের কারখানা প্রাঙ্গণে পড়ে রয়েছে, যা স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় দ্বিগুণের বেশি। এগুলো সবই নবনির্মিত, ক্রেতাদের কাছে সরবরাহের অপেক্ষায় রয়েছে। শুধু কারখানা প্রাঙ্গণই নয়, অসরবরাহকৃত উড়োজাহাজের সংখ্যা এতই বেড়ে গেছে যে কোম্পানিটি এখন তাদের কারখানার নিকটস্থ এয়ারফিল্ডে সেগুলো রাখার ব্যবস্থা করতে বাধ্য হচ্ছে।
উরেশ শেঠ জানান, সিয়াটলের উত্তরে বোয়িং কারখানার কাছে একটি বিমানবন্দরের বন্ধ রানওয়েতে ঝকঝকে নতুন ড্রিমলাইনার সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে। নর্থ চার্লস্টনে বোয়িংয়ের ডেলিভারি সেন্টার ও একটি পেইন্ট হ্যাঙ্গারের আশেপাশে বেশ কয়েকটি ৭৮৭ রাখা হয়েছে। এমনকি কোম্পানিটি বাধ্য হয়ে ক্যালিফোর্নিয়ার ভিক্টরভিলের একটি ডেজার্ট লটে অতিরিক্ত ড্রিমলাইনার রাখার জন্য পাঠাতে শুরু করেছে।
গত বছর বিশ্বজুড়ে একের পর এক ৭৩৭ ম্যাক্স গ্রাউন্ডেড করার পর এমনিতেই সেগুলো রাখার জায়গার সংকটে রয়েছে বোয়িং। কর্মীদের পার্কিং লট দখল করে সেখানে জেট বিমানগুলো রাখার মাধ্যমে কোনোমতে এ সংকট কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে তারা। এর মধ্যেই নতুন আপদ হয়ে দাঁড়িয়েছে নবনির্মিত ৭৮৭ ড্রিমলাইনারগুলো।
দুটি বড় দুর্ঘটনার পর গত বছরের মার্চ থেকে বোয়িং ৭৩৭ ম্যাক্স দিয়ে বাণিজ্যিক ফ্লাইট পরিচালনা বন্ধ হতে থাকে। সে সময়ের পর থেকে এখন পর্যন্ত কোম্পানিটির কার্যক্রম পরিচালনায় প্রায় ২ হাজার কোটি ডলার খরচ হয়েছে। এ ব্যয় নির্বাহের জন্য বোয়িং ৭৮৭-কেই তাদের আয়ের প্রধান উৎস হিসেবে দেখছিল। কিন্তু করোনা মহামারীর কারণে দূরপাল্লায় ভ্রমণের পাশাপাশি বড় উড়োজাহাজগুলোর চাহিদাও কমেছে। ফলে অসরবরাহকৃত ড্রিমলাইনারের পাহাড় জমেছে বোয়িংয়ের কাছে। এটি কোম্পানিটির আর্থিক চাপও বাড়িয়ে দিচ্ছে।
মহামারীর কারণে আকাশসেবা সংস্থাগুলো মারাত্মক অর্থ সংকটে ভুগছে। ফলে তারা নতুন উড়োজাহাজের কার্যাদেশও কমিয়ে দিচ্ছে। অনেকে আবার আগে দেয়া কার্যাদেশগুলো বাতিল করে দিচ্ছে। কিছু সম্ভাব্য ক্রেতা যুক্তরাষ্ট্রের করোনা পরিস্থিতি খারাপ দেখে সেখানে তাদের প্রতিনিধি পাঠাতে ভয় পাচ্ছে।
ব্লুমবার্গ ইন্টেলিজেন্সের বিশ্লেষক জর্জ ফার্গুসন বলেছেন, ‘আগামী বছর দুয়েক ৭৮৭ ড্রিমলাইনারের জন্য খুব খারাপ যাবে।’ শুধু টুইন আইলের ৭৮৭ নয়, বোয়িংয়ের ৭৭৭ এবং এয়ারবাসের এ৩৫০ ও এ৩৩০ নিও উড়োজাহাজগুলোও করোনা মহামারীর কারণে চাহিদা সংকটে ভুগছে। কারণ দূরপাল্লার ফ্লাইট চলাচল বন্ধ। তাই বড় উড়োজাহাজের প্রয়োজনও নেই এখন। এমনকি আকাশসেবা সংস্থাগুলো পুনরায় ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি পেলেও প্রাথমিকভাবে তারা অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটের দিকেই বেশি নজর দেবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সেক্ষেত্রে তুলনামূলক ছোট উড়োজাহাজগুলোই প্রয়োজন হবে তাদের। ফলে বড় উড়োজাহাজগুলোর চাহিদায় মন্দা ভাব আরো দীর্ঘায়িত হবে। বিষয়টি নিশ্চিতভাবেই বোয়িংয়ের সংকট আরো বাড়াবে।