নতুন অ্যান্টিবায়োটিক আবিষ্কার করল বাংলাদেশ

২০১০ সালে বাংলাদেশি বিজ্ঞানী মাকসুদুল আলম কর্তৃক পাটের জীবন রহস্য উন্মোচনের পর পাট নিয়ে গবেষণায় আরও বেশি জোর দিয়েছেন এ দেশের বিজ্ঞানীরা। পাটের জীবন রহস্য বের করতে গিয়ে তিনি এর বিভিন্ন অংশে নানা রকম অণুজীবের সন্ধান পান। এবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েল প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. হাসিনা খানের নেতৃত্বে একই বিভাগের অণুজীব বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক রিয়াজুল ইসলামকে সাথে নিয়ে শুরু হয় নতুন গবষেণা। রিয়াজুল ইসলাম দেখতে পান পাটের তন্তুর খাঁজে খাঁজে ৫০টিরও বেশি অণুজীবরা ব্যাকটেরিয়ায় বাস করে, যা থেকে জীবন রক্ষাকারী অ্যান্টিবায়োটিক তৈরি সম্ভব হয়েছে। এসব ব্যাকটেরিয়ার মধ্যে স্টেফাইলো কক্কাস হোমিনিস নামের একটি ব্যাকটেরিয়া পাওয়া যায়; যা তার শরীর থেকে এমন কিছু তৈরি করে যা অন্য ব্যাকটেরিয়াকে ধ্বংস করতে সক্ষম।
তাহলে কি আছে সেই ব্যাকটেরিয়ায়? এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার কাজ শুরু করেন জিন প্রকৌশল ও জৈব প্রযুক্তি বিভাগের অধ্যাপক আফতাব উদ্দিন।
ড. হাসিনা খান বলেন, এই জেনোমের মধ্যে থেকে বেরিয়ে আসে নতুন এই এন্টিবায়োটিকের খোঁজ। যখন এটিকে আলাদা করা হচ্ছে তখন এটি থেকে বের হচ্চে পাঁচটি আলাদা সংস্করণ। অনুজীবের সংক্রমণ বন্ধ করতে প্রত্যেকটিই কার্যকর। যা বাঁচিয়ে দিতে পারে এন্টিবায়োটিক রেজিটেন্স হওয়া অনেক রোগীর প্রাণ।
এ বিষয়ে ড. আফতাব উদ্দিন বলেন, এই ব্যাকটেরিয়া ক্ষতিকর অন্য ব্যাকটেরিয়াকে আক্রমণ করে এবং এভাবে রোগীর জীবন রক্ষা করতে পারবে।
ড. রিয়াজুল ইসলাম বলেন, এই ধরনের অ্যান্টিবায়োটিকের কিছু বাড়তি সুবিধা আছে। এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলাও খুব কঠিন।
আর গবেষণার একপর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের জিন প্রকৌশল ও জীব প্রযুক্তি বিভাগের অধ্যাপক ড. আফতাব উদ্দিন প্রমাণ পান, প্রচলিত অ্যান্টিবায়োটিক রেজিসটেন্স হওয়া রোগীর জীবন এই ব্যাকটেরিয়া রক্ষা করতে পারে। গবেষকরা নতুন এই অ্যান্টিবায়োটিকের নাম দিয়েছেন-হোমিকরসিন। ব্যাকটেরিয়া ও পাটের বৈজ্ঞানিক নামের সাথে মিল রেখে নতুন এই এন্টিবায়োটিকের নাম দেয়া হয়েছে হোমিকরসিন।
গত মে মাসে ‘সায়েন্টিফিক রিপোর্ট’ জার্নালে সদ্য নজরে আসা অ্যান্টিবায়োটিক নিয়ে একটি গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশ পেয়েছে। ২০১৮ সালে শুরু হওয়া এই গবেষণায় যুক্ত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কজন শিক্ষার্থী। গবেষণায় সহায়তা করেছে বাংলাদেশ বিজ্ঞানও শিল্প গবেষণা পরিষদ (বিসিএসআইআর)।
চিকিৎসা বিজ্ঞানে ব্যবহৃত বেশিরভাগ অ্যান্টবায়োটিকই জীবাণুর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা হারিয়েছে। হাসপাতালেও রোগীরা সুপার বাগ নামে পরিচিত এমন কিছু ব্যাকটেরিয়ায় সংক্রমিত হচ্ছেন যা প্রচলিত কোন অ্যান্টিবায়োটিকেই নিরাময় হচ্ছে না। সেখানেও সফল হয়েছে এই নতুন এন্টিবায়োটিক।
শুধু তাই নয়; হোমিকরসিনের নামের এই এন্টিবায়োটিকের মোট পাঁচটি ধরন পেয়েছেন তারা। যা এন্টিবায়োটিকের ইতিহাসে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে; যেখানে লেখা থাকবে বাংলাদেশের নাম।